মহান আল্লাহ মানব জাতির ইহকাল ও পরকালের সর্ব প্রকার মঙ্গল ও সফলতার চাবিকাঠি দ্বীন ও ইসলামের মধ্যে নিহিত রেখেছেন। দ্বীন ও ইসলামেরর মৌলিক শাখা পাঁচটি: ১. সহীহ আকিদা-বিশ্বাস ২. ইবাদত-বন্দেগী ৩. লেন-দেন ৪. সামাজিকতা ৫. আচার-আচরণ। আল্লাহর আদেশ ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নূরানী তরীকানুযায়ী উল্লিখিত শাখার উপর জীবন-যাপন করার নাম দ্বীন। এ দ্বীন মানুষকে মনুষত্য শিক্ষা দেয়। এমনকি মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ, যথার্থ ও চমৎকার দিকনির্দেশনা। এ নির্দেশনা মেনে জীবন-যাপনকারী একজন সাধারন থেকে সাধারন মানুষও সমাজের সুনাগরিক বলে বিবেচিত হয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের তালিকায় শামিল হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন দ্বীন ও ইসলামের সেই নির্দেশনাগুলোর সঠিক জ্ঞান লাভ করা। তাই হাদীসের ভাষ্যমতে সকল মুসলমান নর-নারীর জন্য দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জন ফরজ। আর এই জানা ও মানার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আদর্শ মুসলিম জাতি-সত্ত্বা গড়ে উঠবে, অন্যথায় নয়। ইসলামী আদর্শ জাতি গঠনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক সাহাবীর জন্য দ্বীন শেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যার শিক্ষক ছিলেন তিনি নিজেই। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- ‘তিনি নিরক্ষরদের মাঝে তাদের মধ্য থেকে একজন নবী প্রেরণ করেছে; তিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াত তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত (সুন্নাহ) শিক্ষা দান করেন। [সূরা জুমআ-০২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- আমি শিক্ষক রূপে প্রেরিত হয়েছি। [ইবনে মাজাহ-২২৯]
সর্বস্তরের মুসলিম তথা স্কুলগামী শিশু-কিশোর, যেকোনো পেশাজীবি যুবক-বয়স্ক কীভাবে প্রয়োজনীয় এই ফরজে আইন পরিমাণ দ্বীনি ইলম অর্জন করতে পারে এ বিষয়ে হযরত উলামায়ে কেরামের ফিকির ও মেহনত সর্বদা অব্যাহত ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে, ইনশাআল্লাহ!
তবে প্রত্যেক মুসলমান যেন নিজ নিজ জাগতিক পড়া-শোনা, পেশা ও কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে সহজেই দ্বীনের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে সেজন্যে এ মেহনতকে কোর্সভিত্তিক একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া ছিল বর্তমান যুগ ও সমাজের একটি অপরিহার্য দাবী। এ দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক রাষ্টে কুরআন ও মৌলিক দ্বীন শেখার শিরোনামে প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২য় রমাযানুল মুবারক রোজ শনিবার ১৪৩৯হিজরী মোতাবেক ১৯মে ২০১৮ঈ. সনে মাহাদুল কুরআন ঢাকা এর পথ চলা। আলহামদুলিল্লাহ! আজ অবধি বড়দের দু’আ ও নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানটি স্বীয় লক্ষ্যপানে এগিয়ে চলছে।
আমাদের লক্ষ্য
১। সমাজের ৯৮% মুসলিম জনগোষ্ঠীকে মৌলিক দীন তথা ফরযে আইন পরিমাণ ইলম শেখানো।
২। সকল মুসলিমকে কুরআন মাজীদের সহীহ-শুদ্ধ তেলাওয়াত শেখানো।
৩। তাহারত, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাতসহ জীবঘনিষ্ট গুরুত্ত¡পূর্ণ বিষয়াবলির জরুরি মাসাইল শিক্ষাদান।
৪। সকল মুসলিমকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সৎ ও নীতিবান মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা।
৫। উলামায়ে কেরামের সাথে সাধারণ মুসলিমের শ্রদ্ধা ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা।
৬। সকল মুসলিমকে দ্বীনি বিষয়ে চিন্তাগত বা কর্মগত বিভ্রান্তি থেকে দূরে রাখা।
৭। এদেশের বর্তমান ও আগামী শিশু-কিশোরদেরকে নাস্তিকতা ও ধর্মদ্রোহীতার বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা করে তাদের মাধ্যমে একটি আদর্শবান মুসলিম প্রজন্ম তৈরি করা।
৮। স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনে ‘আফটার স্কুল মাকতাব’ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা।
৯। মসজিদভিত্তিক চলমান রেওয়াজী মাকতাবগুলোকে ‘মুনাজ্জাম মাকতাব’ এ রূপান্তরিত করা।
১০। উম্মতকে মাখলূকের দাসত্ত¡ থেকে মুক্ত করে রবের দাসত্ত¡ মেনে চলার জন্য প্রস্তুত করা।
নববী যুগে সবার জন্য দ্বীন শেখার নমূনা
দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা কোন বয়সের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। ছোট বেলায় যেমন দ্বীন শেখা জরুরী, তেমনি যারা শৈশবে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করতে পারেনি তারা বয়স্ক হলেও তাদের দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করা জরুরী। ইমাম বুখারী রহ. বলেন- নবীজি আলাইহিস সালামের সাহাবীরা বয়স্ক অবস্থায় ইলম অর্জন করেছেন। [বুখারী ১/১৯]
□□ হযরত উমর রাদি. বলেন, আমি এবং আমার এক প্রতিবেশী আনসারী (ইতবান ইবনে মালেক) মদীনার শহরতলীতে বনী উমাইয়্যা ইবনে যায়েদ গোত্রে বসবাস করতাম। আমরা পালাক্রমে নবীজি আলাইহিস সালামের কাছে আসতাম। সে একদিন আসত আর আমি একদিন আসতাম। আমি যেদিন আসতাম, ঐ দিনের ওহী (দ্বীনি ইলম) ইত্যাদি সংবাদ তার কাছে নিয়ে আসতাম। আবার সে যেদিন ‘নবীজি আলাইহিস সালামের দরবারে আসত সেও অনুরূপ করত...[সহীহ বুখারী ১/১৯]
□□ আল্লাহর রাসূল সা. একদিন খুতবায় একদল মুসলমান সম্পর্কে খুব প্রশংসা করলেন। অতঃপর বললেন-
ما بال أقوام لا يفقهون جيرانهم ، ولا يعلمونهم ، ولا يعظونهم ، ولا يأمرونهم ، ولا ينهونهم
ঐ সকল সম্প্রদায়ের কি হল যে, তারা তাদের প্রতিবেশিদেরকে দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করে না এবং তাদেরকে সৎকাজের আদেশ করে না অসৎ কাজে থেকে বাধা প্রদান করে না? আর ঐ সকল সম্প্রদায়ের কি হল যে, তারা তাদের প্রতিবেশিদের থেকে দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করে না? আল্লাহর কসম! ঐ সকল সস্প্রদায় হয়তো তাদের প্রতিবেশিদেরকে দ্বীন শেখাবে, সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর প্রতিবেশি সম্প্রদায়ও তাদের থেকে দ্বীন শিখবে। নতুবা আমি তাদের দুনিয়াতে দ্রæত শাস্তি প্রদান করবো। অতঃপর মিম্বার থেকে নেমে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। এরপর লোকেরা বলল, এদের দ্বারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাদেরকে উদ্দেশ্য নিয়েছে? অন্যরা বলল, আমরা মনে করি যে, তিনি আশআরীদের উদ্দেশ্য নিয়েছেন। তারা দ্বীন শিক্ষায় শিক্ষিত সম্প্রদায়। আর তাদের প্রতিবেশিরা অবুঝ ও বেদুঈন। এ খবর আআরীদের নিকট পৌঁছলে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এক সম্প্রদায়ের খুব প্রশংসা করেছেন আর আমাদের নিন্দা করেছেন। তাহলে আমাদের কি সমস্যা? তদুত্তরে তিনি বললেন, ঐ সকল সম্প্রদায় হয়তো তাদের প্রতিবেশিদেরকে দ্বীন শেখাবে, সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে।আর প্রতিবেশি সম্প্রদায়ও তাদের থেকে দ্বীন শিখবে। নতুবা আমি তাদের দুনিয়াতে দ্রæত শাস্তি প্রদান করবো। এপর তারা বলল, আমরা কি অন্যদেরকে শেখাবো? তদুত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পূর্বোক্ত কথাকে পুনরাবৃত্তি করলেন। তারাও তাদের কথা পুনরাবৃত্তি করল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাঁর কথাকে পুনারাবৃত্তি করলেন। তারা বলল, তাহলে আমাদেরকে একটি বছর সুযোগ দিন। অতৎপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে এক বছর সুযোগ দিলেন, যাতে তারা তাদেরকে দ্বীনি শিক্ষা দান করতে পারেন।...(কানযুল উম্মাহ-৮৪৫৩, ইবন সাকান বলেন, হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য)
সাধারণ মুসলিমের ইলম অর্জনের কোর্স বিষয়ে পূর্বসুরিদের ভাবনা
□□ ১৯৭১ সালের ৮আগস্ট দ্বীনি শিক্ষা কাউন্সিলে ভাষণে সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেন, দ্বীনি চেতনা ও ধর্মীয় দ্বায়িত্ববোধ থেকে নতুন প্রজন্মের জন্য দ্বীন শিমক্ষার ব্যবস্থা করুন এবং তাদেরকে ধর্মহীন শিক্ষার প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার সর্বোচ্চা চেষ্টা করুন। প্রথিবীতে দ্বীনকে জিন্দা রাখার জন্য প্রতিটি প্রচোষ্টাই জিহাদ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিটি জনপদে কুরআনি মাকতাব প্রতিষ্ঠা করা এবং এর পিছনে জান মাল ব্যয় করা উচ্চস্তরের তাবলীগ, উচ্চস্তরের জিকির ও অন্যতম জিহাদ। (তাকবীরে মুসালসাল-৩৭৯)
□□ উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা ইউসুফ বিননূরী রহ. বলেন, এ প্রসঙ্গে আমার কামনা, আমাদের প্রধান প্রধান মাদরাসয় যেখানে ইলমী নেসাব ও ইলমী গভীরতার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে সেখানে এমন একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স তাদের জন্য প্রণয়ন করা প্রয়োজন যারা প্রয়োজনমত সাধারণ শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন তারা শিক্ষক বা আলেম হতে চান না; বরং শুধুমাত্র নিজেদের দ্বীনি প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে কুরআন-হাদীস ও ইসলামী বিদ্যাসমূহে অবগতি লাভ করতে চান। এজন্য অনধিক তিন বছরের কোর্স প্রণয়ন করা যেতে পারে। এতে সরফ, নাহব, কুরআন, হাদীস, ফিকহ, আকাঈদ এবং আদব ও তারীখসহ সবই অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এগুলো পড়ে তারা আরবী ভাষায় কথা বলতে ও লিখতে সক্ষম হওয়ার সাথে সাথে নিজ নিজ প্রয়োজন মিটাতে পারবে।
আমি যতদূর জানি, বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান চাহিদা এটি। প্রচুর সংখ্যক মানুষের মনে এ অদম্য আগ্রহ রয়েছে। এর একটি উপকার হবে এই যে, একজন জেনারেল গ্রাজুয়েট আলেমে দ্বীন হতে পারবে। সাথে সাথে আকেটি গুরুত্বপূূর্ণ উপকার হব্ েএই যে, দ্বীনি ও দুনিয়াবী শিক্ষায় যে ব্যবধান রয়েছে এবং দু’সম্প্রদায় মনোভাব ও কর্ম পন্থায় দু’মেরুতে অবস্থান করছে, তাদের সম্মিলিনের ফলে সমাজে সুষম অবস্থা সৃষ্টি হবে। দু’সম্প্রদায় পরস্পর নিকটবর্তী হয়ে যাবে এবং দু’সম্প্রদায় যে কুধারণায় লিপ্ত রয়েছে সে পার্থক্য ঘুচে যাবে। এ জন্য আমাদের তিনটি নেসাব প্রয়োজন হবে-
১.মুদাররিস আলেমের জন্য ২. বিশষজ্ঞ আলেম তৈরীর জন্য ৩. শুধমাত্র দ্বীনি প্রয়োজন মিটানোর জন্য আলম হওয়ার নেসাব। (কওমী মাদরাসা : আকাবিরের ভাবনা, পৃ.৫৯)
□□ হযরতজী মাওলানা ইলিয়াস রহ. বলেন, আলেমগণের নিকট আরজ, তাবলীগ-জামাতের চলাফেরা এবং মেহনত ও কোশেশ দ্বারা সর্বসাধারণের মাঝে শুধু দ্বীনের আগ্রহ ও দ্বীনের মূল্য বোঝার যোগ্যতা সৃষ্টি করা যাবে এবং তাদেরকে দ্বীন শেখার জন্য প্রস্তুত করা যাবে। এরপর তাদেরকে দ্বীন শেখানো এবং দ্বীনি তারবিয়াতের কাজ উলামায়ে কেরাম ও হক্কানী বুযুর্গানে দ্বীনের মনোযোগ ও প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে পারে। তাই এদিকে আপনাদের সদয় দৃষ্টির বড় প্রয়োজন। (মালফ‚যাত নং ১৪২ ও ২১২)
আমাদের বিভাগসমূহ
□ স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের কুরআন ও মৌলিক দীন শেখার
□ আফটার স্কুল মাকতাব বিভাগ
□ স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পার্ট টাইম কুরআন হিফয করার
□ আফটার স্কুল তাহফীজুল কুরআন বিভাগ
যুবক-বয়স্কদের কুরআন ও মৌলিক দীন শেখার
□ফরজে আইন মাকতাব বিভাগ
আরবী ভাষা ও কুরআন বুঝতে আগ্রহী জেনারেল শিক্ষার্থী ও পেশা-জীবি যুবক-বয়স্কদের জন্য
□ইসলামী শরীয়া বিভাগ
দীনি ও সাধারন শিক্ষার সমন্বিত
□ নূরানী মাকতাব বিভাগ
দীনি ও সাধারন শিক্ষার সমন্বিত
□ তাহফীজুল কুরআন বিভাগ
[এক] আফটার স্কুল মাকতাব ও ফরজে আইন মাকতাব বিভাগ
বিভিন্ন দেশের মৌলিক দ্বীন শেখার মান সম্মত কারিকুলামকে সামনে রেখে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের সুচিন্তিত পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনায় দক্ষ এক সিলেবাস টিমের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত সিলেবাস। যা নিম্নরূপ-
۞ পবিত্র কুরআন ۞ সুন্নাহ ۞ ইসলামী আকিদা
۞ ইসলামী ফিক্হ ۞ ইসলামী শিষ্টাচার ۞ আরবী ভাষা
পবিত্র কুরআন
কুরআনী কায়দা : হরফ থেকে শুরু করে বিশদ্ধভাবে (ইজরার সাথে) পূর্ণ কুরআনী কায়দা সম্পন্ন করা।
কুরআনুল কারীম নাযেরা : ৩০ ও ২৯তম পারা শেষ হওয়ার পর ১ম পারা থেকে মশকের সাথে ধারাবাহিকভাবে পূর্ণ কুরআন খতম করা।
নির্বাচিত সূরা মুখস্থ
সূরাতুল ফাতিহা, সূরাতুত দুহা থেকে সূরা নাস এবং ফজীলাতপূর্ণ বিশেষ ৭টি সূরা, যথা- সূরাতু ইয়াসীন, আর-রহমান, মূলক, ওয়াকিয়া, নাবাহ, ফাতাহ ও কাহাফসহ মোট ৩০টি সূরা মুখস্থকরণ।
সুন্নাহ
মাসনূন দোয়া ও কর্মের সুন্নাত পদ্ধতি : দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় মাসনূন দোয়া ও বিভিন্ন কর্মের সুন্নাত পদ্ধতি শিক্ষাদান।
কুরআনে বর্ণিত দোয়া সমূহ : কুরআনে বর্ণিত দোয়া সমূহ মুখস্থ করণ।
নির্বাচিত হাদীস মুখস্থ : ঈমানিয়াত, ইবাদাত, মু‘আমালাত-মু‘আশারাত, আদাব-আখলাকসহ দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ ও দৈনন্দিন ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োজনীয় ৪০হাদীস অর্থসহ মুখস্থকরণ।
ইসলামী আকিদা
কালিমা : অর্থসহ কালিামাহ তায়্যিবাহ, কালিমাতুশ শাহাদাহ, আল ঈমানুল মুজমাল, আল ঈমানুল মুফাস্সাল, কালিমাতুত তাওহীদ, কালিমাতুত তামজীদ।
আল আসমাউল হুসনা : আললাহ তায়ালার গুণবাচক ৯৯টি নাম মুখস্থকরণ।
আকিদা বিষয়ক পাঠ : তাওহীদ রিসালাত, ফরেশতা, আসমানী কিতাব, জান্নাত-জাহান্নাম এবং আখিরাত বিষয়ক পাঠদান।
ইসলামী ফিক্হ
ইসলামের চার রোকন : যথা- সালাত, সিয়াম, যাকাত ও হজ্জ।
ইসলামের চার রোকন সংশ্লিষ্ট মাসায়েল : ইসলামের চার রোকন যথা- সালাত, সিয়াম, যাকাত ও হজ্জ এবং কুরবানী সংশ্লিষ্ট মাসায়েল শিক্ষাদান।
ইসলামী শিষ্টাচার
সীরাতুন্নাবী সা. : নবিিজর জন্ম ও শৈশব, নবুওয়াত প্রাপ্তি ও ইসলাম প্রচার, মক্কায় অবস্থান ও হিজরত, মদীনার জীবন বিষয়ক পাঠদান।
আদাব : আল্লাহ, রাসূল সা. ও কুরআনের প্রতি আদাব, মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, ছোট-বড় ও দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় কাজ কর্মের আদাব বিষয়ক পাঠদান।
আখলাক : ব্যাক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে উন্নত আখলাক তথা উত্তম আচার-ব্যবহার, চারিত্রিক মাধুর্যতা ও দ্বায়িত্বশীলতা বিষয়ক পাঠদান।
আরবী ভাষা
আরবীতে গণনা, মাস, সাপ্তাহিক দিন, শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গের নাম, বিষয় ভিত্তিক বিভিন্ন বস্তু সমূহের নাম এবং বাক্য ও প্রশ্নোত্তর।
১ঘন্টা সময়কে যেভাবে বন্টন করা হয়েছে
প্রথমে ২০মিনিট আফটার স্কুল মাকতাব/দ্বীনিয়াত বইয়ের অনুকরণে মৌলিক দ্বীন তথা ফরযে আইনের বিষয়াবলি পাঠদান করা। [প্রত্যহ পাঁচ বিষয়ে সপ্তাহে ৫দিন] পরবর্তি ৪০মিনিট কুরআনী কায়দা/কুরআনে কারীম পাঠদান করা।
[দুই] আফটার স্কুল তাহফীজুল কুরআন বিভাগ
নাযেরায়ে কুরআন তথা পূর্ণ কুরআনে মাজীদ সহীহ শুদ্ধভাবে খতম ও প্রয়োজনীয় সূরাসমূহ মুখস্ত করার পর হিফজ করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীর জন্য এ আয়োজন। আলহামদুলিল্লাহ! বর্তমানে আমাদের প্রধান শাখায় এ বিভাগটিও চলমান। প্রথমে ফজীলতপূর্ণ ৭টি সূরা মুখস্থ করে ধারাবাহিকভাবে অবশিষ্ট পারাগুলো হিফজ করা হয়।
ক্লাসের সময়
বাদ ফজর দু’ঘন্টা। মাগরিবের পরেও সময় দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। নিয়মিত পিছনের পড়া শোনাসহ মেধানুপাতে সামনের পড়া মুখস্ত করানো হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, নিয়মিত মাদরাসায় না পড়েও আমাদের এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পার্ট টাইম সময় দিয়ে জেনারেল শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবি ভাই-বোনেরা কুরআনে মাজীদের হিফজ করছে; আলহামদুলিল্লাহ!
[তিন] দ্বীনি ও সাধারন শিক্ষার সমন্বিত নূরানী মাকতাব বিভাগ : (সময়কাল-৩ বছর)
শিশুদেরকে সহীহ শুদ্ধরূপে পূর্ণ কুরআনে কারীমের নাজরানা তেলাওয়াত ও গুরুত্ত¡পূর্ণ সূরাসমূহ এবং আম্মাপারা হিফজসহ নূরানী পদ্ধতির শিক্ষার সাথে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থা।
[চার] দ্বীনি ও সাধারন শিক্ষার সমন্বিত তাহফীজুল কুরআন বিভাগ : (সময়কাল - সর্বোচ্চ ৪ বছর)
যে সকল মেধাবী ছাত্র হাফেজে কুরআন হতে ইচ্ছুক তাদের জন্য মক্তব বিভাগ সমাপ্ত করার পর চার বছরে তাহফীজুল করআন বিভাগে কুরআনে কারীমের হিফজ ও সাধারণ শিক্ষার ৪র্থ শ্রেণী সমাপ্ত করার ব্যবস্থা।
[পাঁচ] ইসলামী শরীয়া বিভাগ
ফরজে আইন পরিমাণ ইলম অর্জন করার পর যে সকল শিক্ষার্থী দ্বীন শেখার ধারা অব্যহত রাখতে চায় তাদের জন্য এ আয়োজন। অতএব, এ বিভাগে কুরআনের হাফেজ এবং কলেজ-ভার্সিটির ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী ও যেকোন কর্মব্যস্ত মুসলিম ভাইয়েরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে- আরবী ভাষার সাথে সম্পর্ক তৈরি করে কুরআনের অর্থ বুঝতে সক্ষম হয় সে স্তরে নিয়ে যাওয়া। বর্তমানে আমাদের প্রধান শাখায় এ বিভাগটিও চলমান। প্রস্তাবকারে তাদের জন্য একটি সিলেবাসের খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
শরীয়া বিভাগে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য
■ দেখে সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআনপাঠ জানা থাকতে হবে।
■ কমপক্ষে এস. এস. সি./সমমান পাশ।
■ নিয়মিত দরসে উপস্থিতির মানসিকতা থাকতে হবে।
■ যেকোন পেশার যেকোন ব্যাক্তি ভর্তি হতে পারবেন।
এ বিভাগের ক্লাসের সময়
১ম ব্যাচ : প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ৯.০০-১১.৩০
২য় ব্যাচ : রবিবার থেকে বৃহ:বার সকাল ৬.৩০-৮.০০
৩য় ব্যাচ : সোমবার ও মঙ্গলবার সন্ধা ৬.৩০-৮.০০
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবর্ষ :
সব বিভাগের শিক্ষাবর্ষ জানুয়ারীতে শুরু হয়ে ডিসেম্বরে শেষ হয়। তবে আফটার স্কুল মাকতাব ও যুবক-বয়স্ক ব্যাচে প্রতি তিন মাস পর পর নতুন শিক্ষার্থী নেওয়া হয়।
পাঠদান পদ্ধতি
[ক] প্রতিটি বিষয়ের নির্ধারিত সিলেবাস অনুযায়ী পাঠদান ব্যবস্থা।
[খ] প্রতি বিষয়ের পাঠ ক্লাসেই শেখানো হয় ও আদায় করা হয়।
[গ] দক্ষ হাফেজ সাহেব কর্তৃক সাপ্তাহিক সিফাতসহ কুরআনের বিশেষ মাশকের ব্যবস্থা।
[ঘ] সাপ্তাহিক ও মাসিক পরীক্ষা গ্রহণ, বক্তৃতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞানসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রদের মেধা ও মননের উৎকর্ষ সাধন করা হয়।
পরীক্ষা : বছরে দু’টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়; অর্ধ বার্ষিক ও বার্ষিক। পরীক্ষার পর মার্কশীট এর মাধ্যমে ফলাফল প্রদান ও মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে অভিভাবক এবং সুধীদের উপস্থিতিতে শিক্ষা-প্রদর্শনী ও সিলেবাস বিষয়ক পর্যালোচনা করা হয়।
বিভাগওয়ারী খরচের তালিকা
আফটার স্কুল মাকতাব বিভাগ : ভতি ফি-১০০০/- মাসিক বেতন-১২০০/-
আফটার স্কুল হিফজুল কুরআন বিভাগ : ভতি ফি-২০০০/- মাসিক বেতন-২০০০/-
ফরজে আইন বিভাগ : ভতি ফি-১০০০/- মাসিক বেতন- ১২০০/-
নূরানী মাকতাব বিভাগ : ভতি ফি-৬০০০/- মাসিক বেতন-৫০০০/-
ইসলামী শরীয়া বিভাগ : ভতি ফি-১৫০০/- মাসিক বেতন- ২০০০/-
ভর্তির সময় সদ্য তোলা ১কপি ছবি ও জন্ম সনদ/জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
মাহাদুল কুরআন ঢাকা এর শিক্ষকবৃন্দ
১. মুফতি মুহাম্মাদ মিকাঈল হুসাইন
২. ক্বারী মাওলানা মুহাম্মাদ রায়হানুদ্দীন
৩. হাঃ মাওলানা মুহাম্মাদ আঃ আন নাঈম
৪. হাঃ মাওলানা মুহাম্মাদ কামরুল ইসলাম
৫. ক্বারিয়া উম্মে ত্বলহা
সাম্প্রতিক
Loading...